দর্পণ | ধারাবাহিক কলম | উপন্যাস ~ কংসাবতী | (পর্ব --৮)




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

উপন্যাস ~ কংসাবতী

   উপস্থাপনায় ~ মহুয়া 


ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরলেও সুচেতাকে ওর কাকা কিছুই বললো না । রাত্রে খেতে বসে শুধু বললো ,"তুমি বড় হয়েছ , অক্ষরজ্ঞান নয়,উচ্চশিক্ষার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছ শুধু তোমার বাবা তোমাকে নিজের পায়ে দাঁড় করাবে এই জেদে । আমি জানি তুমি তোমার বাবার ইচ্ছের অমর্যাদা করবে না , এই বিশ্বাস আমার আছে "। সুচেতা শুধু বললো " আমি জানি কাকু , আমি আপনার ঋণ ও কখনো শোধ করতে পারবো না । আপনি ও তো আমার আর এক বাবা । আমি আপনাদের বিশ্বাস রাখবো "।©️

 কলেজ , টিউশন , পড়াশুনো আর প্রতুল এই নিয়েই কেটে গেলো থার্ড ইয়ার আর প্রতুলের ফোর্থ ইয়ার । এই এক বছরে ওরা আর ও কাছাকাছি এসেছে দুজন দুজনের । পড়াশুনোর ফাঁকে ফাঁকে কলকাতার মোটামুটি সব দ্রষ্টব্য স্থানগুলো ঘুরেছে । আজকাল যেন দুজন দুজনের পরিপূরক হয়ে উঠেছে । এত কিছুর মধ্যে শুধু একটাই কষ্ট , প্রতুলের বাবা বলেছে , প্রতুল ভালো রেজাল্ট করলে ওকে বিদেশ থেকে এম বি এ করাবে । একদিন প্রতুল লেকে ঘুরতে যাবার সময় দুর থেকে ওদের বাড়িটা দেখিয়েছিল । বেশ বড় তিনতলা বাড়ি । বড়ো গেট আর গেটের মাথায় লেখা "গুলমোহর"। প্রতুল কে জিজ্ঞেস করেছিল সুচেতা বাড়ির নাম গুলমোহ র কেনো ? প্রতুল বলেছিল , নামটা ওর ঠাকুরদার দেওয়া । কারণ ওর ঠাকুমাকে ওর ঠাকুর্দা নাকি কোনো এক গুলমোহর গাছের তলায় দেখেছিল পড়ন্ত রোদে চুল শুকোতে । ঠাকুমা নাকি বসেছিল আর চারিদিকে গুলমোহরের ফুল ছড়িয়েছিল। ঠাকুমা দাদুর দুজনের বিয়ের কুড়ি বছর পর এই বাড়ি বানিয়েছিল দাদু আর নাম দিয়েছিল "গুল মোহর"। প্রতুলের মুখ থেকে বিভোর হয়ে সুচেতা গল্প শুনছিল । গল্পের শেষে প্রতুল চোখ মটকে বলেছিল ,"আমি ওই নামটা তুলে দেবো । নতুন নাম রাখব । বল তো কি ?" সুচেতা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল "কি"? প্রতুল হাসতে হাসতে বলেছিল ,"বুদ্ধু একটা , কালো হীরে "। সুচেতা লজ্জা পেয়ে যায় । বছর গড়িয়ে ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসে । দুজনেই পড়াশুনো নিয়ে বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়ে । আজকাল খুব কমই দেখা হয় দুজনের । কলেজ ও শেষ । ©️


একদিন পরীক্ষা শেষ হয়ে যায় সুচেতার । কিছু দিনের জন্যে গ্রামে আসে । প্রতুলের সঙ্গে সাময়িক ভাবে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায় । কারণ তখন তো মোবাইলের কোনো চল ছিল না ।

ছিল চিঠি , টেলিগ্রাম এসব । ফোন করতে হলে কোনো বুথ থেকে করতে হবে । আর ওদের গ্রামে বুথ বলতে তো ওই ল্যাংড়া গণেশের দোকান । ওখান থেকে ফোন করলে প্রতুল ধরবে কিনা সেটাও বুঝতে পারে না । যদি ওর মা বা বাবা ধরে , তাহলে কি বলবে ও? ফোন করা হয় না । গ্রামে এসে ইস্তক সুচেতার মন খারাপ কিন্তু মুখে হাসি নিয়ে বেড়াতে হয় । এ এক অসহ্য যন্ত্রণা । ©️

একদিন ধবলি গাই কে জাবনা দিচ্ছিল হঠাৎ পোস্টমাস্টার লখাই হাঁসদা হাঁক পারলো ," ই চিন্তা মনি , তুর চিঠি অছি। দৌড়কে আস্যে লিয়ে যা দিকিন । চিঠি ? আমাকে কে দিল ?

চিন্তিত মুখে চিঠি টা নিয়ে নাম পড়তেই হাজার ওয়াটের লাইট জ্বলে উঠলো সুচেতার মুখে। প্রতুলের চিঠি ইংরেজিতে । খুব বুদ্ধি ছেলেটার সুচেতা মনে মনে ভাবে । দুঃসাহসে ভর করে চিঠি দিয়েছে ওদের বাড়ির ঠিকানায় কিন্তু ইংরেজিতে এমন করে দিয়েছে যেন সবাই ভাবে কোনো অফিশিয়াল চিঠি । কি দুষ্টু বুদ্ধি !!!! চিঠি পড়ে সুচেতার আনন্দ আর ধরে না । প্রতুলের পরীক্ষা শেষ , ও আসছে মুকুটমনিপুর লজে । আগামী কালের তারিখ দেওয়া আছে চিঠিতে । সময় হিসেব করে দেখলো দুপুরের মধ্যেই প্রতুল পৌঁছে যাবে । খুশিতে ধবলী গাইয়ের গলা ধরে আদর করে দিল । প্রতুল , প্রতুল ,প্রতুল । খুশিতে এক বস্তা ধান ঢেঁকিতে পাড় দিয়ে দিল । সুচেতার মা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো " কি রে চিন্তা , ইত ফাল পারছুস কেনে ? উ পোষ্ট মাস্টর আস্যেছিল -----"©️

---- হ মা , উ আমার ইকটা ইন্টারভিউ আসেছে বাঁকুড়া থিক্যে , সি চিঠি ট

---- তুকে কাইল বাঁকুড়া যাত্যে হবে ?

------ হ, সনঝা হইয়ে গিলে আমি উ বাতাসির ঘরকে থাইকে যাবো l

------ হ, কিন্তু ইন্টারভিয়ের ইত টাইম লাগবে , হেই গ মা দুগ্গা , মুর বিটি ছিনাট কে দেখিস মা ।


(চলবে)

আগের পর্ব পড়ুন .......

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ