ধারাবাহিক উপন্যাস || এক সমুদ্র অনেক নদী || প্রদীপ গুপ্ত || পর্ব -- চার




পোস্ট বার দেখা হয়েছে

-- শোন, তুমি তোমার ওই ফালতু দিদিটাকে এ বাড়িতে আসতে বারণ করতে পারোনা?

-- মানে? কাকে ফালতু বলছো তুমি? জানো ও রবীন্দ্রভারতী থেকে এম মিউজ করেছে?

--- বাবা মায়ের অগাধ থাকলে দেশে ওরকম মিউজ করা মহিলার অভাব হতো না।

-- এসব তোমার হিংসের কথা। আসলে ওকে তুমি সহ্য করতে পারো না।

--- হিংসে! আমি ওকে হিংসে করি! পত্রালী... , থাক গে। তোমাকে আমার বলার দরকার নেই কীজন্য আমি তোমাকে এ কথা বলছি।

-- কীজন্য আবার? তুমি ভেবেছো আমি কিছু বুঝিনা? আসলে মন্দারদার সাথে ওর সম্পর্কটাকে তুমি মেনে নিতে পারছো মা। মন্দারদার সাথে ওদের প্রেম সেই ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকেই। আর যেহেতু মন্দারদা আমাকে গান শেখান সেকারণেই তুমি ওদের এই সম্পর্কটাকে। এছাড়াও তুমি যে সিক্তাদিকে আড়ালে আবডালে বড়োবড়ো চোখে দেখো সেটাও কি আমি লক্ষ্য করিনি ভেবেছো?

-- তুমি সত্যিই খুব বোকা মেয়ে পত্রালী। নিজের ভালোটাও নিজে বোঝো না। আচ্ছা একটা কথা বলো তো, তোমার টিউশনের শেষে মন্দারবাবু চলে গেলেও তোমার সিক্তা কোন কারণে এবাড়ি ছেড়ে যায়না?

--- আমার একা থাকতে ভয় করে বলে।

-- হা হা হা হা --- এর আগে একা থাকতে তোমার ভয় করতো না? তুমি নিজের পায়ে নিজে কুড়ুলের কোপ মারলে মারো, কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার করে শুনে রাখো, তোমার ওই সিক্তা ফের যদি কোনোদিন আমার অফিসে..

--- মানে?

--- কোনো মানে নেই, সমস্তকিছুর মানে হয় না। আর আমি অন্তত কোনো মানে খোঁজার চেষ্টা করিনি কখনও, আর করবোও না।

--- তুমি মিথ্যে বলছো। তুমি ওকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চাইছো। মন্দারদাকে আমি আজ থেকে চিনিনা, সিক্তা আর মন্দারদার সম্পর্কটা যে তোমাকে জ্বালিয়ে খাচ্ছে সে আমি বেশ বুঝতে পারছি।

-- কী আশ্চর্য! ওদের সম্পর্ক আমাকে কীভাবে জ্বালাবে পত্রালী? এমনটা তো নয়, যে ওরা তোমাকে আমার থেকে কেড়ে নিচ্ছে.. 

---- না, নিচ্ছে না। কিন্তু তুমি সিক্তাদির দিকে ওভাবে তাকানোর অভ্যাসটা ছেড়ে দাও। আমি আমার বাড়ি, বাবামা, ভাইবোন, সহায় সম্পদ সবকিছু ছেড়ে তোমার এই ভাঙা ঘরে এসে উঠেছি। আমাকে একা সামলাতেই তুমি হিমশিম খেয়ে যাচ্ছো, ফের সিক্তাদির দিকে টোপ ফেলতে তোমার লজ্জা করছে না?

রাগকে সামলাতে সেদিন ঘর থেকে বেরিয়ে গেছিলো শ্রেয়ান। অত রাতে নিজেদের বাড়িতেও ফিরে যেতে ইচ্ছে করেনি। অদৃষ্টকে দোষারোপ করে সারাটারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছে। পরদিন ওই অবস্থাতেই কারখানায় গিয়ে ডিউটিতে জয়েন করেছিলো। কিন্তু পত্রালী একটিবারের জন্যও কোথাও ওর খোঁজ করেনি। এমনকি কারখানাতেও না। 



চরে সন্ধ্যা নেমেছে। পাখিগুলো সবাই যে যার ঘরে ফিরে এসেছে। ওদের কলকাকলিতে ভরে গেছে চরার বুক। এখন আর কোনো প্রেমিকপ্রমিকা কোথাও ঝোপেঝাড়ের আড়ালে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে প্রেম নিবেদন করছে না।

সন্ধ্যার অন্ধকার চিরে একটা বাইকের আলো এসে শ্রেয়ানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

--- বাড়ি ফিরবেন না দাদাবাবু?

শ্রেয়ান উঠে দাঁড়ায়। ওর বুক থেকে একটা দীর্ঘনিশ্বাস বেরিয়ে আসে। সিক্তাকে ও অনেক কষ্ট করে ফিরিয়ে দিয়েছিলো ঠিকই, কিন্তু পত্রালী যে মন্দারকে কেন ফিরিয়ে দিতে পারলো না!


( ক্রমশ )

_______________

আগের পর্ব পড়ুন .......

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ